ভারতের শিক্ষানীতি ২০২০: হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের পথে

প্রখ্যাত সাপ্তাহিক 'স্বস্তিকা' পত্রিকার ২৪ আগস্ট ২০২০ সংখ্যায় আমার এই নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।

ভারতের শিক্ষানীতি ২০২০: হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের পথে

ভারত সরকার নতুন শিক্ষানীতি ২০২০ গ্রহণ করেছে। গতবছর ড. কে কস্তুরীরঙ্গন কমিটি খসড়া নতুন শিক্ষানীতি সরকারের কাছে পেশ করেছিল এবং তারপরে সরকার সেই খসড়ার উপর মতামত আহ্বান করেছিল। সে সবের প্রেক্ষাপটেই আজকের আলোচনা।

জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৬৮ ও ১৯৮৬/১৯৯২ পরে এই  শিক্ষানীতি ২০২০ হলো তৃতীয় শিক্ষানীতি, যা আগামী ২০ বছর কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। কস্তুরীরঙ্গন কমিটির বিভিন্ন প্রস্তাবের মূল নির্যাস ও রূপরেখা ভারত সরকার গ্রহণ করেছে। সেই প্রেক্ষিতেই এই নিবন্ধ।

প্রথমেই বলি, এই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি সনাতন ভারতের গৌরবময় অতীতকে পুনরুদ্ধারের পথে এক দৃঢ় পদক্ষেপ। এতোদিনের মেকলীয় শিক্ষাব্যবস্থার বিপরীতে আবহমান ভারতীয় জীবনধারার মূল শিকড়ের সন্ধানে এই শিক্ষানীতি যেন এক দিকনির্দেশক পরিবর্তন- এক পারাডাইম শিফট। শিক্ষা ব্যবস্থার শুধু কাঠামোগত পরিবর্তন নয়, ভাবগত পরিবর্তনই এই নতুন শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য। জীবন সম্বন্ধে এক সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি তথা মূল্যবোধ, যা ভারতীয় ধার্মিক জীবনযাত্রার মূলাধার, সেই মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করেই এই শিক্ষানীতি গৃহীত হয়েছে। এবার দেখা যাক, এই শিক্ষানীতির মূল দিকগুলো, যা মূলতঃ গড়ে উঠেছে 'শিক্ষার্থীকেন্দ্রীকতার' উপর ভিত্তি করেই।

প্রথমেই বিদ্যালয় শিক্ষার আমূল পরিবর্তনের প্রসঙ্গে আসি। পুরনো ৬-১৪ বছর বয়সের সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে ৩-১৮ বছর বয়সের সকলের জন্য সর্বজনীন শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর জন্য সর্বজনীন শিক্ষা অধিকার আইন, ২০০৯ সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে। তবে, জৈবিক, শারীরিক এবং মানসিক উন্নতির ক্ষেত্রে শিশুর প্রথম তিন বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে শিশুর স্বাস্থ্যের অধিকারের সঙ্গে শিক্ষার অধিকারের সমন্বয় সাধন করা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে অবশ্য অঙ্গনওয়াড়ি ব্যবস্থাকে সরাসরি শিশু শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে অঙ্গনওয়ারী ও আশাকর্মীদের শিশু শিক্ষার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে স্কুলের সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন।

বর্তমানের ১০+২ সিস্টেমের পরিবর্তে বিদ্যালয় স্তরে ৫+৩+৩+৪ শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে; যেখানে প্রথমে ৩-৮ বছর বয়সের শিশুদের জন্য ভিত্তিমূলক/ফাউন্ডেশনাল শিক্ষা, তারপর ৮-১১ বছর বয়সের ছাত্রদের জন্য প্রস্তুতিমূলক/ প্রিপারেটরি শিক্ষা, পরে ১১-১৪ বছর বয়সের ছাত্রদের জন্য মধ্য/মিডিল স্তরের শিক্ষা, আর শেষে ১৪-১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ছাত্রদের জন্য সেকেন্ডারি শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। নতুন শিক্ষানীতিতে 'বহুমুখী সমন্বয়মূলক' শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে; যেখানে নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান, কলা বা বাণিজ্য বিভাগের ব্যবস্থা থাকবে না। ছাত্র তার সামর্থ্য ও পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের বিষয়কে বেছে নিতে পারবে। এখানেই প্রত্যেক ছাত্রের 'সাইকোমেট্রিক প্রোফাইল' তৈরী করা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও দশম বা দ্বাদশ শ্রেণীতে সার্বিক ভাবে পরীক্ষা না নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তবে বোর্ডগুলি 'কোর কমপিটেন্সি' যাচাই করতে পারবে। এক্ষেত্রে অন্তত দশম শ্রেণীর জন্য সর্বভারতীয় স্তরে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) দ্বারা এক সার্বিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবা উচিত, যা ছাত্রদের এক সার্বিক মূল্যায়ণের ব্যবস্থা করবে। অবশ্য দ্বাদশ শ্রেণীর পরে এই এনটিএ দ্বারা মহাবিদ্যালয় স্তরে প্রবেশের জন্য এক সার্বিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার ভিত্তিতে কলেজ-স্তরে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলি এই মূল্যায়নকে ব্যবহার করতে পারবে। আর, এই পরীক্ষা বিভিন্ন ভাষাতেই নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এই নতুন শিক্ষানীতিতে বিদ্যালয় স্তরে বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে শুধু গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বললে ভুল বলা হবে; আসলেই সাধারণ জ্ঞানমূলক শিক্ষার সঙ্গে বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যাতে ছাত্ররা 'শ্রমের মর্যাদা' দিয়ে অন্তত একটি বৃত্তিমূলক ট্রেডে স্কিল বা দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এখানেই প্রাচীন ভারতের 'চৌষট্টি কলা'র কথা বলা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের শাস্ত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে হতো। বিভিন্ন বিষয়ের সমাহার ও তার থেকে পছন্দের বিষয়গুলিকে অধ্যয়নের সুযোগ এই শিক্ষানীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।

খসড়াতে যে ‘স্কুল কমপ্লেক্সের’ সুপারিশ করা হয়েছিল, তা এই শিক্ষানীতিতে গ্রহণ করা হয়েছে এবং স্থানীয় স্তরে বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের এবং শিক্ষক ও রিসোর্স আদান-প্রদানকে এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।

খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হচ্ছে সিলেবাস। এক্ষেত্রে এনসিইআরটি-কে একটি 'ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক ফর স্কুল এডুকেশন' তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে 'কোচিং ক্লাস কালচার'কে লোপ করতে 'ন্যাশনাল এসেসমেন্ট সেন্টার'- 'পরখ' অর্থাৎ 'পারফরম্যান্স এসেসমেন্ট, রিভিউ এ্যান্ড অ্যানালাইসিস অফ নলেজ ফর হোলিস্টিক ডেভেলপমেন্ট'
তৈরি করা হচ্ছে, যাতে ছাত্রদের জ্ঞান ও বোধমূলক ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করা যায়; শুধু নোট-ভিত্তিক পড়াশোনা ও পরীক্ষা চালু না থাকে।

ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে তো এই শিক্ষানীতি বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে প্রকৃত ভারতীয়ত্বের মূলসুর তুলে ধরেছে এই শিক্ষানীতি। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মাতৃভাষা/বাড়ির ভাষা/স্থানীয় ভাষাতে শিক্ষাদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা শিক্ষার কথাও বলা হয়েছে। এতে 'বহুভাষিকতা'কেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে; শুধু 'ইংরেজি এলিটিজম'কে বাদ দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে ভারতীয়ত্বের আধার সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে; কারণ, সংস্কৃত না জানলে ভারতের ঐতিহ্যকে জানা যায় না। একই সঙ্গে অন্যান্য ভারতীয় ভাষা, যেমন পালি, প্রাকৃত এবং অন্যান্য ধ্রুপদী ভাষার প্রসার ও অনুবাদের জন্যও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। একই নীতি বিদেশি ভাষার ক্ষেত্রেও নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থী, শিক্ষণ-বিষয় ও শিক্ষক - এই তিনের মেলবন্ধন আবশ্যিক শর্ত। সেক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, পদোন্নতি ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা - এসবের উপরেই এই শিক্ষানীতি জোর দিয়েছে। 'জেনারেল এডুকেশন কাউন্সিলের' মাধ্যমে শিক্ষকদের জন্য একটা 'জাতীয় পেশাগত মান নির্ধারণ' করার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষণের ক্ষেত্রে ৪-বছরের শিক্ষা ও অন্য একটি বিষয় নিয়ে ইন্ট্রিগেটেড বিএড কোর্স চালু করার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, উচ্চশিক্ষায় গবেষণা ক্ষেত্রে ভারতীয় 'গুরু-শিষ্য পরম্পরা' ধারায় মেন্টরিং-এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যার নাম হচ্ছে 'ন্যাশনাল মিশন ফর মেন্টরিং'। আবার, গবেষণার ক্ষেত্রে 'জাতীয় গবেষণা ফাউন্ডেশন' তৈরি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারা গবেষণা স্পনসরশিপের ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধনের কথা বলা হয়েছে।

উচ্চতর শিক্ষা স্তরে ছাত্রদের জন্য বিভিন্ন ধরনের অপসন দেওয়া হবে। কলেজ স্তরে প্রতি বছরের সাপেক্ষেই শংসাপত্র দেওয়া হবে এবং একটা জাতীয় স্তরের 'একাডেমিক ক্রেডিট ব্যাংক' গড়া হবে যেখানে প্রতিটি ছাত্রের অধীত বিষয়গুলি তার ক্রেডিটে নথিভুক্ত থাকবে। মাঝখানে পড়া ছেড়ে দিতে হলেও পরে সেই ছাত্র ক্রেডিট সিস্টেমে আবার পরের ধাপ থেকেই শুরু করতে পারবে। ডিগ্রি কোর্সের ক্ষেত্রে ৩/৪ বছরের অপসন থাকবে, যাতে একজন ছাত্র যে কোনো একটি অপসন নিতে পারে; আবার পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির ক্ষেত্রে সেই অনুযায়ী ১/২ বছরের কোর্সে ভর্তি হতে পারে। ছাত্র-সহায়ক এমন পদ্ধতি আগে অকল্পনীয় ছিল, যা এই শিক্ষানীতি সম্ভব করে তুলছে।

আরেকটি বিষয়। উচ্চতর শিক্ষায় ‘কোলাবোরেটিভ স্টাডিজ’ খুব দরকার। যেমন, একই ক্লাসে দুই/তিন/চার বিষয়ের শিক্ষকদের একটি বিশেষ বিষয়ের উপর ক্লাস নেওয়ার শিক্ষা-পদ্ধতি চালু করা দরকার। তবেই এক সার্বিক তথা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠতে পারে। এখানেই ভারতীয় শিক্ষাধারায় 'চৌষট্টি কলা' অর্থাৎ সমস্ত ধরনের বিষয়ের পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত চর্চার ইতিহাসকে এই শিক্ষানীতি মান্যতা দিয়েছে; যেখানে 'স্টেম' - সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথমেটিক্সকে - কলাশাস্ত্র ও কলাবিদ্যার বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করে সামগ্রিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। আর, সমস্ত ধরনের উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ক্রমশঃ মাল্টিডিসিপ্লিনারী ধরনের করে গড়ে তোলার দিকনির্দেশিকা এই শিক্ষানীতিতে দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা-প্রশাসনের ক্ষেত্রে এই নতুন শিক্ষানীতি 'কেন্দ্রায়িত বিকেন্দ্রীকরণ' তথা 'ক্ষমতার বিভাজনের' নীতি অনুসরণ করেছে। সর্বোচ্চ স্তরে থাকছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে 'ভারতীয় উচ্চতর শিক্ষা কমিশন'; যার অধীনে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়-সাপেক্ষে চারটি পর্ষদ বা কাউন্সিল - (১) চিকিৎসা ও আইন শিক্ষা বাদে সমস্ত ধরনের শিক্ষার জন্য 'জাতীয় উচ্চতর শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, (২) সমস্ত উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাক্রিডিটেশন দেওয়ার জন্য 'জাতীয় অ্যাক্রিডিটেশন পর্ষদ', (৩) আর্থিক সহায়তার জন্য 'উচ্চতর শিক্ষা অনুদান পর্ষদ', ও (৪) উচ্চতর শিক্ষা-সংক্রান্ত মূল্যায়ণের জন্য 'সাধারণ শিক্ষা পর্ষদ'। অন্যান্য সমস্ত প্রোফেশনাল কাউন্সিলগুলি এই সাধারণ শিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে মিলিত হয়ে কাজ করবে। এর ফলে শিক্ষায় জাতীয় ভাবে এক সামগ্রিকতা গড়ে উঠবে।

অন্যান্য সব উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনার ক্ষেত্রে এক সামগ্রিক নীতি-নির্দেশিকা রচনা করা হবে। তবে, সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের - স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত - গভর্নিং কমিটি/বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে ভারতের সংসদের রাজ্যসভার গঠন পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, যাতে শিক্ষা-প্রশাসনে সর্বত্র স্তরে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।

শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে। ভারত সরকার সারা দেশে প্রায় সমস্ত গ্রামেই বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। সব শিক্ষাকেন্দ্রে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা এক কথায় অপরিহার্য। কারণ, বিদ্যুৎ ছাড়া অন্য সব শিক্ষা-প্রযুক্তি ব্যবস্থা প্রায় অচল। 'ন্যাশনাল এডুকেশনাল টেকনোলজি ফোরাম' গঠন করে ই-এডুকেশনকে সর্বস্তরের শিক্ষায় উপযুক্ত ভাবে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অবশ্য একই সঙ্গে উপযুক্ত রক্ষাব্যবস্থা করার জন্য এক সার্বিক তথ্য নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করাও জরুরী।

এই শিক্ষানীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে শিক্ষাকে 'পাবলিক গুডস ও সার্ভিস' অর্থাৎ 'সাধারণের পণ্য ও সেবা' হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া। তাই শিক্ষাকে বাণিজ্যকরণ থেকে বাঁচাতে সমস্ত স্তরেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সর্বোচ্চ ফি নেওয়া থেকে শুরু করে প্রশাসনিক, আর্থিক ও শিক্ষার মান নিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনার কথা বলা হয়েছে।

সমাজের সমস্ত স্তরের সামাজিক-আর্থিক দিক থেকে অবহেলিত অংশ, বিশেষ-ভাবে সক্ষম ছাত্র তথা কন্যা সন্তানদের জন্য এই শিক্ষানীতি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। 'জেন্ডার-ইনক্লুসিভ ফান্ড' তৈরি করা হচ্ছে ছাত্রী ও ট্রান্সজেনডার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। আবার, একই সঙ্গে 'বিশেষ শিক্ষা জোনের' কথা বলা হয়েছে, যেখানে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, 'বিশেষ প্রতিভাবান' ছাত্রদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যাতে 'ব্রেন গেইন' নিশ্চিত করা যায়।

সাধারণ শিক্ষা থেকে শুরু করে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা তথা বিশেষ ধরনের শিক্ষা - সামগ্রিক শিক্ষায় এক দিক পরিবর্তনের সূচনা করছে এই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি। তার জন্য রাষ্ট্রগত ভাবে উপযুক্ত আর্থিক ব্যয়ের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে; সঙ্গে নীতি রূপায়ণের উপযুক্ত স্ট্রাটেজিও।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও পরিস্কার নীতি নির্দেশিকার অবকাশ আছে। যেমন, ০-৬ বছরের শিশুদের জন্য অঙ্গনওয়ারী কর্মীদের ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা কি হবে; সংবিধান অনুযায়ী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে এই শিক্ষানীতির প্রয়োগ; সংবিধানের যৌথতালিকায় থাকা শিক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির ভূমিকা, বিশেষতঃ আর্থিক ক্ষেত্রে ইত্যাদি।

শেষে শুধু এটুকুই বলতে হয়, ঔপনিবেশিকতা তথা ধর্মবিশ্বাস-জনিত শিক্ষা-ব্যবস্থার অনুকরণশীলতা ও পশ্চাদমুখীনতার বেড়াজাল ভেঙে এই নতুন শিক্ষানীতি ভারত্মাতার মূলসুরকে আত্মস্থ করে আবহমান ভারতের হৃতগৌরবকে পুনরুদ্ধারের পথে এক আবশ্যিক পদক্ষেপ।
@ সুজিৎ রায়
01.09.2020

No comments:

Post a Comment